ফাইভার এ কাজ করার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা - শুরুর কথা
আসসালামুয়ালাইকুম। কয়েকদিন আগে ফাইভার এর সমস্যা নিয়ে পোষ্ট করেছিলাম। যেগুলো আমি নিজেই ভুক্তভোগী। কেননা নতুন হিসেবে ফাইবারের নিয়ম-কানুন জানার কারণে এমন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ সে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আজকে আপনাদের সাথে সে সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করবো। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক বিস্তারিত আলোচনা।
Fiverr Tips Bangla...
০১# - ফাইভার একাউন্ট ভেরিফিকেশন
আমরা যারা ফাইভারে নতুন, তারা প্রায়সই এই সমস্যাই ভুগে থাকি। ফাইভার গিগ পাবলিশ করার পর অর্ডার পেয়ে যাই, আর অর্ডার কমপ্লিট করার পরেই দেখি ফাইভার একাউন্ট ভেরিফিকেশন এর ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি নিজেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আজকে আমার নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
আমি বারবার যে ভুলটা করেছিলাম। সেটা হলোঃ NID CARD এর প্রথম পৃষ্ঠা দিয়েছিলাম এবং পরে অপর পৃষ্ঠা। পরপর ৩বারের বেশি এই ভুল করাই আমার ফাইভার একাউন্ট টি টেমপোরারি ভাবে ডিজেবল হয়ে যায়। অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে "সফল ফ্রিল্যান্সার" এ পোষ্ট দিলে অনেক হেল্প পাই এবং সেটার সমাধান করি।
০২# - কিভাবে সমাধান করলাম?
আমার ফাইভার একাউন্ট এ লগিন করে সাপোর্টে একটা টিকেট সাবমিট করলাম। আরেকটা চান্স দেওয়ার জন্য এবং উনারা আমাকে আরেকটি চান্স দেন। এরপরে ভালো একটা স্মার্টফোনে ফাইভারের পেজে লগিন করি Chrome Browser দিয়ে। এরপর পিসি থেকে লগিন করার পর ভেরিফিকেশন এর জন্য ফাইভার থেকে একটি QR CODE দেয়। আমি আমার স্মার্টফোন দিয়ে সেটি স্ক্যান করলে আরেকটা পেজে নিয়ে যায়। সেখানে আমার NID CARD এর প্রথম পৃষ্ঠা একটি সাদা পেপারের উপর রেখে স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলে সাবমিট করি। কোন প্রকার এডিট, কর্তন, মার্জন ছাড়া।
এরপর সাবমিট দিলে আরেকটি অপশন আসে, সেলফির জন্য। এক্ষেত্রে আমি আমার বন্ধুর সাহায্য নিই। এক কালারের ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে বলি ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে স্বচ্ছ ছবি তুলতে।
উল্লেখ্য যে পর্যাপ্ত পরিমান আলোর ব্যবস্থা সেখানে ছিলো কারন যায়গাটি স্টুডিওর দোকান। এবার সে ছবি সাবমিট করার পরে ৫ মিনিটের মধ্যেই নোটিফিকেশন আসে Fiverr Account Verified.
ফাইভার একাউন্ট ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবার পরে কষ্টের অর্জিত টাকা উত্তলনের ঝামেলাই পড়তে হয়। এক্ষেত্রে আমি যেইটা করেছিলাম। ফাইভার থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের জন্য ক্লিক করলে তারা আমাকে পেওনারের পেজে নিয়ে যায়। আমি নতুন করে সেখানে সাইন আপ করি এবং ব্যাংক একাউন্ট এড করি আমার "রকেট" মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট। কিছুক্ষণ পরে এপ্রুভ হয়। এবার, ফাইভার থেকে ব্যালেন্স উইথড্র দিই। ক্লিক করা মাত্রই ডলার সব শুন্য হয়ে যায়। পেওনিয়ারেও সেই টাকা নেই। সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার হয়ে গেছে এবং ট্রাঞ্জেকশন বাবদ এক্সট্রা ৩ ডলার কেটেছে। এবার আমার মনে ভয় কাজ করতে থাকে। একে তো মোবাইল ব্যাংকিং তার উপরে ৬০০ ডলার। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই!
আমার সিনিয়র স্যারদের কল দিই। কেউ কেউ বলেন, টাকা জলে গেলো। কেউ কেউ সান্তনা দেন। অবশেষে "সফল ফ্রিল্যান্সার" এও এই বিষয়টা শেয়ার করলাম। কিন্ত কারও কমেন্ট এ ভরসা পেলাম না!
অবশেষে, ফাইভারের সাপোর্ট এ টিকেট সাবমিট করলাম আর পেওনিয়ার এর লাইভ চ্যাট এ অংশ নিলাম। উনারা বললেন। আপনার ট্রাঞ্জেকশন সাকসেস হয়েছে। ১৭তারিখে টাকা ট্রাঞ্জেকশন করেছেন। ২০ তারিখে আপনার টাকা পেয়ে যাবেন।
এইবার ২০ তারিখ সকাল যায়, দুপুর যায়। মন আর টিকেনা। অবশেষে ২ বার ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং কাষ্টমার সাপোর্টেও কল দিয়েছি। উনারা বলছেন, ১৭ তারিখ তো বৃহস্পতিবার ছিলো স্যার। এরপরে তো আর কর্ম দিবস ছিলোনা। অপেক্ষা করুন টাকা পেয়ে যাবেন। এখনও মন মানলোনা।
এবার পেওনিয়ার কল সেন্টারে কল দিলাম। ইংরেজিতে অনেক পাকা বলে ১৮ মিনিটে ১.৩৮ সেকেন্ড লস করলাম। কিছুক্ষণ পরেই দেখি Your Rocket Account Credited ম্যাসেজ। আমি তো বলদ বুনে গেলাম। ব্যালেন্স চেক করি সব ঠিকঠাক আছে। খামোখা এতো টেনশন নিয়েছিলাম।
এতো টাকা কল সেন্টারে উড়ালাম। যাই হোক, অভিজ্ঞতা হলো। আমি চাই, আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনারাও শেখেন।
#০৩ - ফাইভার স্কিল টেষ্ট
ফাইভারে একটা গিগ পাবলিশ করতে গেলেও আপনাকে Fiverr Skill Test দেওয়া লাগবে। আমাকেও দিতে হয়েছে! চরম বাস্তবতা শেয়ার করছি তাহলে শোনেনঃ
আমার ইংরেজি প্রাইভেট টিচার ছিলেন। উনাকে ফোন দিয়েছিলাম সময় দেবার জন্য কিন্ত উনি মহা ব্যস্ত এবং অন্য কারও রেফারেন্স দেন। যাক গে, স্যার মানুষ তাই কষ্ট পেলেও গায়ে মাখিনি। এবার, আমার উচ্চ শিক্ষিত এলাকার টপ বন্ধুকে বসালাম পিসিতে। ও আল্লাহ! ২ বার ফাইভার স্কিল টেষ্ট দিয়েও পাশ করতে পারলোনা।
এবার নিজেই ব্রেইন খাটালাম। আমার ওয়াইফের ফাইভার একাউন্ট থেকে ফাইভার স্কিল টেষ্ট দিলাম আর উত্তর গুলো নিলাম গুগোল থেকে আমার স্মার্টফোনের মাধ্যমে। কারন পিসিতে ফাইভার স্কিল টেষ্ট এর পেইজ থেকে কোথাও যেতে দিবেনা। এমনকি স্কাইপ কলেও দেখা যায়না। এটাও পরিক্ষিত।
যাইহোক, এইবার শুরু হলো নকল করার পালা। পরিক্ষা শুরু। আমার মোবাইল ফোনে এন্সার পেজে সার্চ দেওয়াও শুরু। কয়েকটা শব্দ লিখে সার্চ দিই আর শাটাশাট এন্সার মারি। রেজাল্ট ৩৫ আউট অফ ৪০! ওরেহ পেয়ে গেলাম আকাশের চাঁদ! তারপরের দিন আমার একাউন্টটিও নকল করে পাশ করাই।
এই হলো ফাইভার এ কাজ করার আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতা। Fiverr Tips Bangla হিসেবে শেয়ার করলাম, আপনাদের অনেকের কাজে আসতে পারে।
Freelancing Geek থেকে আরো পড়ুন...
Fiverr Tips Bangla - আমাদের শেষকথা
ফাইভার এ কাজ করতে গিয়ে আপনি কি এমন কোন স্পেশাল অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছেন? তাহলে শেয়ার করুন Fiverr Tips Bangla। নতুন ফ্রিল্যান্সার দের কাজে লাগবে। ধন্যবাদ ফাইভার এ কাজ করার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে এই আর্টিকেল টি পড়ার জন্য।