সফলতার গল্পে আজ আমরা রাসেল আহমেদ ভাইয়ার জীবনের গল্প জানবোঃ
গত কিছুদিন আগে রাসেল আহমেদ ভাই তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে উনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো তুলে ধরেছেন। বর্তমানে তিনি প্রফেশনাল কাজে তুরস্কে অবস্থান করছেন। চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
সাল অনুযায়ী আমার ( রাসেল আহমেদ ) কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট
২০০১ - ক্লাস এইটে পড়ি, সংসারের অভাব বুঝতে পারি, সারাদিন এ গাছে ওগাছে চড়ে বেড়াতাম বলে বিভিন্ন মানুষদের ফুট-ফরমাশ খাটতাম। গাছে উঠে সুপারি পেড়ে দিতাম, নারিকেল পেড়ে দিতাম, বিনিময়ে যা সুপারি পেতাম সেগুলা চারা বানিয়ে বাজারে বিক্রয় করতে যেতাম।
Rasel Ahmed | Freelancing Geek |
২০০২ -
সদ্য ক্লাস নাইনে উঠেছি। রেজিস্ট্রেশন করতে ৪৫০ টাকার মত লেগেছিলো। নিজেদের একটা তেতুলের গাছ ছিল, সেই তেতুলের আঁচার বানিয়ে বৈশাখি মেলায় বেচেছিলাম। নিজের জমানো বারো টাকা ছবি উঠেছিলাম স্ট্যাম্প সাইজের। আর যেদিব ভর্তি হয়েছিলাম, সেদিনের বাজার বাড়িতে হয়নি, কারন ৪৫০ টাকা অনেক টাকা ছিল তখন।
২০০৩ -
পুরোদমে মাঠে কাজ করা শুরু করেছি। কারন এসএসসির ফর্মপূরনের সময় ৮০০-১০০০ টাকা লাগবে। বৃহস্পতিবার হাফস্কুল হতো বলে যেতাম না, আর শনিবার যেতাম না ইংরেজি ২য় পত্র ক্লাসের জন্য। কারন বই কেনার টাকা ছিল না। প্যারাগ্রাফ, রচনা এসব লোকের বাড়ি বাড়ি থেকে লিখে আনতাম।
২০০৪ -
এসএসসি পাশ করেছি, সাথে কাগজের ব্যাগের নতুন ব্যবসা শুরু করেছি। বাড়ির পাশের একজনের কাগজের ব্যাগ বানিয়ে দিতাম, ঠিকমত টাকা দিত না, তাই নিজেই শুরু করেছি অল্প করে। এছাড়াও কেকের প্যাকেট বানাতাম। ভালই আয় হতো, কিন্তু লেখাপড়ার বারোটা বাজছিলো, প্রাইভেট পড়ার টাকা ম্যানেজ হতো না তাই প্রাইভেট পড়তে পারিনাই। এদিকে এসএসসির রেজাল্ট ৩.০ হওয়ার কারনে অনেকেই সাইন্স নিতে মানা করলো, কিন্তু একপ্রকার জোর করেই সাইন্স নিয়েছি।
২০০৫ -
কাগজের ব্যবসা ভাল চলছে, অনেক টাকা পুঁজি হয়েছে। এদিকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর লাইনে দাড়াচ্ছি, যদি চাকরি হয়।
২০০৬ -
ব্যবসার চাপে ঠিকঠাক কলেজ যেতে পারি না। আর কলেজে যাওয়ার মত ভালো পোশাক-আশাকও নাই। কেজি দরে কাপড় পাওয়া যেত সেটা দিয়ে আব্বু জামা বানিয়ে দেওয়ার কারনে বন্ধুরা কেজির সিট বলে ক্ষেপাতো, তাই আরও যেতাম না।
২০০৭ -
পড়ালেখার বারোটা বেজে গেছে, পড়াশোনা প্রায় ছেড়েই দিব এমন। ফর্মপূরণ করতে পারলাম না। এদিকে কম্পিউটার জানার কারনে এক ফ্রেন্ডের চাকরি হয়ে গেল সেনাবাহিনীতে। তাই ভাবলাম আমিও শিখি। কিন্তু টাকা নাই। অগ্যতা আম্মু তার বিয়ের গহনা বিক্রয় করে ১৫০০ টাকা দিলেন, সেটা দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম।
২০০৮ -
পরীক্ষার জন্য এবার ফর্মপূরণ করলাম। পাশও করলাম। কম্পিউটার শেখাতে ভালোভাবে মননিবেশ করলাম। সারাদিন কম্পিউটারের দোকানে থাকতাম বলে তেমন টাকা খরচ হতো না বাইরে, জমাতাম। সেই দোকানে বেতন শুরু হয়েছিলো ১০০ টাকা প্রতি মাস। আস্তে আস্তে বেতন বেড়ে ১২০০ টাকা হল।
২০০৯ -
স্থানীয় প্রথম আলোর সাংবাদিক উজ্জ্বল ভাইয়ের দোকানে চাকরি নিলাম। ওখান থেকে শিখলাম জীবন মানে কি, কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিভাবে প্লেটে খেতে হয়। উনার নিজ বাসা থেকে খাবার আসতো, একসাথে বসে খেতাম, অনেক স্বাদ লাগতো, আসলে তেমন খেতে পাইতাম না, সেই ভালো খাবারের স্বাদ ভোলার মত না।
২০১০ -
নিজের টাকা জমিয়ে নিজেই একটা দোকান দিলাম। মোট ছিল ১৫ হাজার টাকা। ৫০০০ টাকা দিয়ে দোকানের সিকিউরিটি জমা দিলাম, তারপর ১০০০০ টাকা দিয়ে একটা কম্পিউটার কিনলাম, কনফিগারেশন: ৪৫৫ মেগা হার্জ, ৬৪ মেগা র্যাম, ৬ বা ৮ জিবি হার্ডডিস্ক। সেটা দিয়েই কোনমতে ছবির স্টুডিও, মোবাইলে গানলোড, টাইপিং এসব করতাম।
২০১১ -
ব্যবসায় অনেক উন্নতি করলাম, আলহামদুলিল্লাহ। দোকানে ফটোকপি মেশিন, ইন্টারনেট এসব ছিল। কম্পিউটার হয়েছিলো অনেকগুলা। ইন্টারনেটে মেইল করতে করতে দেখলাম ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। শিখতে শুরু করলাম। তখন প্রজন্মফোরাম, রংমহল, আমাদের প্রযুক্তিফোরাম এসব খুবই জনপ্রিয় ছিলাম। সেখানে গিগদের দেখে অনুপ্রেরণা নিতাম। টেকনোলজি জানার জন্য ছিল টেকটিউনস, জুয়েল ভাই এর কম্পিউটার এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ওখানে অনেক ভালো ভালো আর্টিকেল পাওয়া যেত, সেগুলা দেখে দেখে শিখতাম।
২০১২ -
ব্যবসা ভালই চলছিলো, পাশাপাশি ডিগ্রী পরীক্ষা দেওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। এইচএসসির রেজাল্ট ভালো না হওয়াতে কোন বিশ্ববিদ্যালয়তো দুরের কথা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স হয়েছিল না। ভালই হয়েছিল, ব্যবসাতে ভালো করছিলাম, বাড়িতে অনেক সাপোর্ট করতে পারছিলাম। এরই মধ্যে মনে হচ্ছিলো আমাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে, অফিসার হতে হবে। মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় এর ব্যবসা ছেড়ে উপজেলা ই-সেন্টারে বিনা বেতনে চাকরি নিলাম। কারন ওখানে বেতন না থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন কাজ ই-সেন্টারে করা যাবে, অফিসারদের সাথে থাকা যাবে।
অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে স্কিল ডেভেলমেন্ট এর বিকল্প নেই। স্কিল ডেভেলপ করতে চাইলে রাসেল আহমেদ ভাইয়ের ইউটিউব চ্যানেল টি ঘুরে আসুন এবং সাবস্ক্রাইভ করে রাখুনঃ https://www.youtube.com/channel/UC94qXY-Icq1xaoGCQI11-mw ফেসবুকেও উনাকে অনুসরন করতে পারেনঃ https://www.facebook.com/public/Rasel-Ahmed
২০১৩ -
পরিচয় হল মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম নামের একজনের সাথে, উনি আমার চিন্তাভাবনা পুরাই বদলে দিলেন। আমি কে তা বুঝতে শেখালেন। আমি উনার সাথে আঠার মত লেগে থাকলাম। কারন এতদিনে আমি যা খুঁজেছি তা পেয়ে গেছি। ট্রেনিং নিতে গেলাম খুলনাতে, সেখানেই প্রথমে ওডেস্কে কাজ পাই। একাউন্টে ডলার জমা হয়, আমার খুশি দেখে কে।
২০১৪ -
ওডেস্কে (বর্তমানে Upwork ) মাসে ৬০ - ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি ইল্যান্সেও কাজ পাচ্ছিলাম। পরে তো প্রোফাইল মার্জ হয়ে গেল। শুরু করলাম সবাইকে শেখানো, প্রতিষ্ঠা করলাম আর. আর. ফাউন্ডেশন।
২০১৫ -
আবাসিক ট্রেনিং শুরু করলাম, পাশাপাশি করতে থাকলাম কাজ। অস্ট্রোলিয়া এবং কানাডার দুটি কোম্পানীতে ফিক্সড জব পেলাম। বেতন ভালোই মাসে ২-৩ লাখ টাকা মত আসতো, নিজের বাড়ি কমপ্লিট করে ফেললাম তিন তলা।
২০১৬ -
নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকলাম। এলাকাতে ট্রেনিং দেই বলে মানুষের রোষানলে পড়লাম, হামলার শিকার হলাম, বাধ্য হয়ে ঢাকা যেতে হল।
২০১৭ -
ঢাকায় ট্রেনিং সেন্টার ছিল, পাশাপাশি নিজেও কাজ করতাম একটা ইউএস কোম্পানীতে, আগের চেয়ে বেশি বেতন পেতাম।
ফ্রিতে ভাল কিছু যদি শিখতে চান তাহলে রাসেল আহমেদ ভাইয়ার করা ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসুনঃ উনার ওয়েব সাইটের নামঃ শিখুন
Shikhun.net Freelancing Geek |
২০১৮ -
নিজের কিছু বিজনেস প্রতিষ্ঠা করলাম, আশেপাশে জমি নিলাম বাগানবাড়ি করবো বলে।
২০১৯ -
দেশে থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করলাম।
২০২০ -
কোম্পানীতে প্রমোশন পেলাম। প্রায় ৮০ জনের টিমের হেড হয়ে কাজ করা শুরু করলাম, বেতনাদি ইউএস স্কেলে। ফেব্রুয়ারীতে দেশ ছাড়লাম পিএইচডির উদ্দেশ্যে।
২০২১ -
এই বছরের লক্ষ্য হল নিজের পাসপোর্ট পরিবর্তন করার জন্য কাজ শুরু করা, আল্লাহ সহায় হবেন। দোয়া করবেন।